স্বামী বিবেকানন্দ বলেছিলেন, “আমি বিশ্বাস করি যে, কেউ কিছু পাওয়ার উপযুক্ত হলে জগতের কোনো শক্তিই তাকে বঞ্চিত করতে পারে না।” তবে এও সত্যি, কর্মই মানুষের নিয়তির গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে তাই কোন কিছু না করে বসে বসেই সব হাতে পাওয়া যাবে এটা ভাবা অন্যায়। নতুন বছর পড়া মাত্র আমরা সকলেই কিছু অঙ্গীকারবদ্ধ হই। এই অঙ্গীকার ইতিবাচকতার দিকে, সাফল্যের লক্ষ্যে। কিন্তু কয়েকদিন যেতে না যেতেই সেই লক্ষ্য হারিয়ে যায়, অঙ্গীকার মন থেকে মুছে যেতে থাকে। তাহলে কি উপায়?
এবছর এসো আমরা আরোও একটা অঙ্গীকারবদ্ধ হই, যে বছরের প্রথমে যে লক্ষ্য আমি স্থির করব সেখান থেকে আমাকে কেউ নড়াতে পারবে না, শেষ পর্যন্ত নিজের উপর বিশ্বাস রাখা এবং লক্ষ্যে অবিচল থাকা এই হোক ২০২৪-এর নতুন প্রতিজ্ঞা। সামনেই আছে সরকারি চাকরির একাধিক পরীক্ষা- Food SI, PSC, Clerkship। সরকারি চাকরির প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র যে কতখানি কঠিন তা সকলেরই জানা। এই প্রতিযোগিতায় টিঁকে থাকতে গেলে একমাত্র পথ কঠোর পরিশ্রম! পরিশ্রমবিমুখ হলে বছরের পর বছর পরীক্ষা দেওয়াই সার হবে কাজের কাজ কিছু হবে না। তাই প্রথমদিন পরীক্ষার ফর্ম পূরণ করার সময় থেকেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে রাখা ভাল যে এই স্বপ্নপূরণের জন্য দিনরাত্রি এক করে পরিশ্রম করতে হবে। মন্ত্রের সাধন নইলে শরীর পাতন!
পরীক্ষার সঠিক প্রস্তুতি হয়েছে তখনই বলা চলে যখন সবগুলো বিষয় সমানভাবে তৈরি হয়। এইজন্য সময়কে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানা দরকার। প্রথমে একটা রুটিন ঠিক করে নেওয়া উচিত কোন বিষয়ে দক্ষতা আছে কোন বিষয়ে দুর্বলতা তার উপর নির্ভর করে। প্রত্যেকটি বিষয় সেই রুটিন অনুযায়ীই যে সবসময় পড়া যাবে এমনটা নাও হতে পারে, কিন্তু তা বলে রুটিন বাতিল করা যাবে না। কারণ শৃঙ্খলাবদ্ধতাই সাফল্যের প্রথম সোপান, রুটিন সেই শৃঙ্খলার অন্যতম উপাদান।
চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং সেইসঙ্গে সবচেয়ে ভয়ের যে জায়গাটা সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে থাকে তা হল অংক। তাই অংকের ক্ষেত্রে কোন রুটিন খাটে না, বরং প্রাত্যহিক রুটিনে অংক থাকা উচিত। পৃথিবী তোলপাড় হয়ে গেলেও অংক কষায় কামাই করা যাবে না- এইরকম দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিয়ে অংক কষলে একদিন সেই বিষয়টা, যত কঠিনই হোক না কেন, ঠিক আয়ত্তের মধ্যে চলে আসবে। কথায় বলে পেতলের ঘটিও রোজ মাজলে সোনার মত ঝকঝক করে!
সাধারণ জ্ঞান চাকরির পরীক্ষার ক্ষেত্রে এমন একটা বিষয় প্রিলি থেকে ইন্টারভিউ পর্যন্ত যার গুরুত্ব হারায় না। সাধারণ শুনতে হলেও ব্যাপারটা ততটা সাধারণ নয়। এর জন্য নিয়ম করে প্রতিদিন সংবাদপত্র পড়তে হয়, গুরুত্বপূর্ণ খবরের তলায় দাগ দিয়ে রাখতে হয়, নোটবুকে ছোট করে নোটস রাখতে হয়। তেমন তেমন ঘটনা হলে সেই খবরের পরম্পরা অনুসরণ করে নিজের ভাষায় নোট রাখতে হয়। এও প্রাত্যহিক রুটিনের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং, দৈনন্দিন ঘটনা জানতেই হবে, বিশ্বের সঙ্গে সম্পর্কসূত্র ছিন্ন করলে চলবে না।
অর্জুনকে তাঁর গুরু দ্রোণাচার্য গাছের ডালে বসে থাকা একটি পাখির প্রতি তাক করতে বলে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘কী দেখতে পাচ্ছো?’ উত্তরটা আমরা সবাই জানি যে অর্জুন বলেছিলেন ‘কেবল পাখির চোখটি’। বলাবাহুল্য যার যত লক্ষ্যে নিবদ্ধ দৃষ্টি, যে যত মনোযোগী সে তত তাড়াতাড়ি সাফল্যে পায়, লক্ষ্যে পৌঁছায়। আর লক্ষ্যে না পৌঁছে তো থামা যাবে না, তাই মনোযোগের পথে যত বাধা তা প্রথমেই দূর করে দিতে হবে। প্রথম এবং অবশ্যম্ভাবী বাধা মোবাইল ফোন এবং সমাজমাধ্যম। মন দিয়ে পড়ার সময় বারবার মোবাইল দেখা, সমাজমাধ্যমে বিভিন্ন পোস্টে প্রতিক্রিয়া দেওয়া মনোযোগ সম্পূর্ণ নষ্ট করে দেয়। বর্তমান যুগে মোবাইল একেবারে বাদ দিয়ে চলাই যায় না। কিন্তু মন দিয়ে পড়ার সময় তো তার থেকে দূরে থাকাই যায়? তাই ২০২৪-এর মনসংযোগের অন্যতম মন্ত্র হোক সামাজিক মাধ্যমকে নীরব করে দেওয়া- অন্তত পড়ালেখার সময়টুকুতে।
সবশেষে বলতে হয় প্রতিবারের মত এবারের প্রতিজ্ঞা অঙ্গীকারগুলো হারিয়ে যেতে দেওয়া যাবে না, কারণ এগুলো নিজেকে নিজেরই দেওয়া প্রতিশ্রুতি! পালন করলে তবেই হবে সাফল্য অর্জন! সবার জীবনে সাফল্য ও সৌভাগ্য বয়ে আনুক নতুন বছর। শুভ ২০২৪!
Published on May 14, 2024