সরকারি চাকরি যাদের লক্ষ্য সেইসব ছাত্রছাত্রীদের কাছে বেলঘরিয়ায় RICE Education-এর দিশারী ভবন একটি বিদ্যাতীর্থ স্বরূপ। সরকারি চাকরির প্রতিযোগীতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে প্রতি বছর ছাত্রছাত্রীরা এখানে আসে। সকলেই যে স্থানীয় বা পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের এমন নয়, জেলাগুলি থেকেও শিক্ষার্থীরা এখানে পড়তে আসে। পরিবার বা নিজের বাড়ি থেকে দূরে চলে এসে, মেসে থেকে, অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও তারা দিশারীতে প্রস্তুতি নিতে চায়। এহেন গুরুত্ব যে দিশারী ভবনের তার জনপ্রিয়তার মূল কারণ কি, সাফল্যের কোন রহস্য এই ঐতিহ্যবাহী ভবনকে ঘিরে আছে, এখানে ছাত্রছাত্রীদের অভিজ্ঞতা কেমন সে বিষয়ে আলোকপাত করাই বর্তমান নিবন্ধের লক্ষ্য!
স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষিত যুবাদের জন্য কর্মসংস্থানের একটি লাভজনক ক্ষেত্র ছিল সরকারি চাকরি। কিন্তু প্রয়োজনীয় যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ব্যর্থতার কারণে তাদের সরকারি চাকরি অর্জনের স্বপ্ন সফল হচ্ছিল না। 1970 থেকে 80-র দশকের শুরু পর্যন্ত পরিস্থিতি প্রায় একইরকম হতাশাব্যঞ্জক ছিল। এইরকম সময় অধ্যাপক সমিত রায় বুঝতে পারেন, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় ব্যর্থতার বীজ লুকিয়ে আছে ওই পরীক্ষার প্রস্তুতির মধ্যেই। প্রতিযোগিতার জন্য পদ্ধতিগত প্রস্তুতির অভাবই সরকারি কর্মচারী নিয়োগের পরীক্ষায় ব্যর্থতার মূল কারণ। প্রফেসর সমিত রায় একজন বিশেষজ্ঞ গণিতবিদ, গাণিতিক সমস্যার দ্রুত এবং সহজ সমাধান নিয়ে চর্চা করতেন। গণিতে স্নাতক হওয়ার পর তিনি কম্পিউটারও অধ্যয়ন করেছিলেন। যখন তিনি স্বনামধন্য একটি তথ্য প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে দায়িত্বপূর্ণ পদে চাকরি করছিলেন তখন তাঁর এলাকার কয়েকজন তাঁকে ব্যাংকিং পরীক্ষার জন্য গণিত শেখানোর জন্য অনুরোধ করে। তিনি রাজি হন এবং সপ্তাহান্তে তাদের নিজস্ব স্টাডি রুমে প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করেন। কয়েক মাসের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে কর্মকর্তা নিয়োগের পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ওই শিক্ষার্থীরা বিশাল সাফল্য পায়। সেই শুরু, এই সাফল্যের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে প্রফেসর সমিত রায় বাংলার আরও অনেক তরুণকে সরকারী চাকরিক্ষেত্রে সফল কর্মজীবনেপ্রতিষ্ঠিত করতে 1985-র 1 জুলাই যতীন দাস নগরে, Institute of Competitive Examination Pvt Ltd প্রতিষ্ঠা করেন। খুব অল্প সময়ের মধ্যেই RICE-এর ছাত্ররা WBCS, Bank, Indian Railway, PSC ইত্যাদির মতো বিভিন্ন নিয়োগে সফল হতে শুরু করে। প্রফেসর সমিত রায় এবং তাঁর প্রতিষ্ঠান RICE সরকারি চাকরি অর্জনের মত কঠিন কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়েছিলেন। RICE এর নাম এবং খ্যাতি শীঘ্রই সমগ্র পশ্চিমবঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। অনেক তরুণ স্নাতক প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। যুবক-যুবতীদের এবং তাদের অভিভাবকদের ক্রমবর্ধমান আগ্রহ প্রফেসর রায়কে বাংলার বিভিন্ন স্থানে RICE-এর শাখা খোলার কথা ভাবতে বাধ্য করে। শাখা বিস্তারের প্রক্রিয়ায় প্রতিষ্ঠানের প্রধান কার্যালয় হিসাবে বেলঘরিয়ায় একটি নতুন ভবন প্রতিষ্ঠা করার পরিকল্পনা করা হয়- সেইটিই বর্তমানের দিশারী ভবন।
১৯৯৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের মাননীয় রাজ্যপাল শ্রী এ.আর কিদওয়াই বেলঘরিয়ায় রথতলার কাছে বিটি রোডের পাশে দিশারী ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন আর ২০০১ সালে ২৬ জানুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মাননীয় শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য হেড অফিসের নতুন ভবন, ‘দিশারী ভবন’-এর উদ্বোধন করেন। ছয় তলা এই বিল্ডিং-এ আছে ৩২টি ক্লাসরুম যেখানে প্রতিদিন সকাল ৯.৩০ থেকে সন্ধ্যা ৬টা অবধি ক্লাস হয়।
দিশারী ভবনে রয়েছে স্টাডি মেটেরিয়াল ডিপার্টমেন্ট, যেখান থেকে প্রতিবছর কম্পিটিটিভ পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের ট্রেন্ড পর্যবেক্ষণ করে সেই অনুযায়ী গবেষণানির্ভর পাঠ্যবস্তু তৈরি করা হয়। RICE-এর একজাম ডিপার্টমেন্টটিও এখানে অবস্থিত যেখান থেকে প্রতিষ্ঠানের সমস্ত টেস্ট, মকটেস্ট, মান্থলি টেস্ট, মিশন হান্ড্রেড ইত্যাদি পরীক্ষা পরিচালনা করা হয়। পরীক্ষার পর সমস্ত জেলার পরীক্ষার খাতা এখানে এসেই জড়ো হয়, খাতা দেখা হয় এবং তারপর চেক করা খাতা পাঠিয়ে দেওয়া হয় নির্দিষ্ট ব্রাঞ্চে। এই বিল্ডিং-এর ৫ তলায় রয়েছে একটি সমৃদ্ধ লাইব্রেরী যেখানে পঠনপাঠনের জন্য প্রচুর মূল্যবান ও দুষ্প্রাপ্য বই, কম্পিটিটিভ পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় বইপত্র, সাময়িক পত্র এবং দৈনিক খবরের কাগজ ইত্যাদি পাওয়া যায়। ছাত্রছাত্রীরা যাতে এখানে বসেই নিজের মতো পড়াশুনা করতে পারে তার জন্য সুষ্ঠু ও পর্যাপ্ত বসার ব্যবস্থাও আছে। দিশারী লাগোয়া স্পেন্সার্সের অ্যানেক্সচার বিল্ডিং-এ রয়েছে ইন্টারভিউ রুম যেখানে প্রকৃত ইন্টারভিউ রুমের পরিস্থিতির সঙ্গে ছাত্রছাত্রীদের অভ্যস্ত করতে মক ইন্টারভিউগুলি নেওয়া হয়। এছাড়াও ছাত্রছাত্রীদের খাবার ব্যবস্থা করে একটি ক্যান্টিন রয়েছে দিশারী ভবনের একতলাতে, এখানে উন্নত মানের খাদ্য ন্যায্য মূল্যে পাওয়া যায়। রয়েছে স্ন্যাক্স ভেন্ডিং মেশিন। এখানে রয়েছেন ১২০ জন বিশেষজ্ঞ শিক্ষক যাঁরা শিক্ষার্থীর পড়াশোনা সংক্রান্ত যেকোন সমস্যায় যে কোন সময় সাহায্য করতে প্রস্তুত। দিশারীর কর্মীরাও ছাত্রছাত্রীদের প্রতি বিশেষ যত্নবান। এখানে সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে ফ্যাকাল্টিরা পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের প্রতি খেয়াল রাখেন যে তারা নিয়মিত ক্লাস করছে কিনা, কোথাও কোন অসুবিধা হচ্ছে কিনা, পরীক্ষাগুলোতে অংশগ্রহণ করছে কিনা ইত্যাদি নানা খুঁটিনাটি বিষয়। আসলে তাঁরা তো জানেন, জীবিকা অর্জনের প্রস্তুতিতে জীবনের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় মুহূর্তের সহায়তা পেতে ছাত্রছাত্রীরা এখানে এসেছে তাই তাদের প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার দিয়ে সবরকম সহায়তা করতে দিশারী ভবনের কর্মীরা সদা তৎপর।
দিশারী ভবনে প্রায় ৪৫০০ জন ছাত্রছাত্রীর একসঙ্গে ক্লাস করার পরিকাঠামো রয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩২০০ জন ছাত্রছাত্রী এখানকার পঠনপাঠনের সঙ্গে যুক্ত আছে। এইসব শিক্ষার্থীরা তাদের পড়াশোনায় প্রতিনিয়ত উৎসাহ পায় কেবলমাত্র এখানকার শিক্ষকদের থেকে নয়, তাদের সহপাঠী এবং বন্ধুদের থেকেও। এখানে একটা সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবেশ বর্তমান, একজন শিক্ষার্থীর প্রচেষ্টা, লড়াই অন্যজনকে উৎসাহিত করে, অনুপ্রাণিত করে। এখানে এমন অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যারা মেসে নিজের থাকা খাওয়ার খরচ বাঁচিয়ে তারপর আর অটোভাড়া যোগাড় করতে পারে না বলে রোজ হেঁটে ক্লাস করতে আসে, অনেকে এমন আছে যারা অন্য রাজ্যের বাসিন্দা- বাংলা বলতে জানে না, অনেকে আবার নিজের খাবার নিজে রান্না করে খেয়ে বাসনটা মেজে রেখে পড়তে আসে। এদের প্রত্যেকের দঁতে দাঁত চেপে করা লড়াই পরস্পরকে সাহস যোগায়। বন্ধুদের সঙ্গে থাকতে থাকতে অবাঙালী ছাত্রটি বাংলা পড়তে বলতে এমনকি লিখতেও শিখে যায় তারপর চাকরিও পায় এমন বিভাগে যেখানে বাংলা জানাটা অত্যাবশ্যক! হেঁটে আসা ছাত্রটি পায় নীল বাতি লাগানো সরকারি গাড়ি, যে হাত পুড়িয়ে রান্না করে তারপর পড়াশোনা করত সেই হয়ে যায় WBCS একজিকিউটিভ। এসব গল্পকথা নয়, সত্যি ঘটনা যা দিশারীর দেওয়ালে কান পাতলেই শোনা যায়।
সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রতিযোগিতামূলক ক্ষেত্রে সাফল্য শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যার উপর নির্ভর করে না। এর জন্য প্রয়োজন প্রকৌশলী পদক্ষেপ যা RICE Education-এর মতো অভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠান তার ক্যাপাসিটি বিল্ডিং-এর মাধ্যমে গড়ে তোলে। RICE Education প্রকৌশলগত পরিকল্পনা এবং সময়কে কার্যকরভাবে ব্যবহার করার উপর জোর দেয়। সরকারি চাকরির পরীক্ষার বিশাল সিলেবাসকে RICE নির্দিষ্ট সংখ্যক স্টাডি মেটেরিয়ালে ভাগ করে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনাকে খুব সহজেই সময়ের সঙ্গে সুবিন্যস্তভাবে গুছিয়ে দেয়। এর ফলে তারা প্রতিটি বিভাগের দৈর্ঘ্য ও তাৎপর্য বিবেচনা করে সময় বরাদ্দ করতে শেখে, ব্যাপক সিলেবাস দেখে অভিভূত হয়ে পড়ে না বরং সবটা শিখে-পড়ে দক্ষতা অর্জনের চেষ্টা করে। RICE Education যে স্টাডি মেটেরিয়াল সরবরাহ করে তা প্রশ্নপত্রের সাম্প্রতিক প্রবণতা বিশ্লেষণ করে গবেষণামূলক অনুসন্ধানের মাধ্যমে তৈরি করা হয় যা শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমকে গভীরভাবে বোঝার সুযোগ করে দেয়। RICE Education দ্বারা গৃহীত মান্থলি টেস্ট, মক টেস্টগুলি শিক্ষার্থীদের আসল পরীক্ষার আবহের সঙ্গে আগে থেকেই অভ্যস্ত করতে থাকে। এখানে তারা বুঝতে পারে প্রস্তুতিতে কোথায় কমতি থেকে যাচ্ছে এবং তাদের কাছে সুযোগ থাকে সেই খামতি পূরণ করে নেওয়ার। এই নিয়মিত অনুশীলন, প্রত্যেক পরীক্ষায় আগের আগের পরীক্ষার বিষয়গুলি রিভিশন করে নেওয়ার অভ্যাস প্রস্তুতির মূল্যায়ন এবং উন্নতির জন্য খুবই কার্যকর হয়েছে সকল সফল শিক্ষার্থীদের কাছে। একাধিক টেস্টই ছাত্রছাত্রীদের ক্ষমতার বিশদ বিশ্লেষণ করে তাদের প্রকৌশলগুলিকে আরও নিখুঁত করতে এবং তাদের দুর্বলতাগুলিকে সংশোধন করতে সহায়তা করে।
RICE Education-এর যেকোন শাখাই ছাত্রছাত্রীদের প্রতি সমান যত্নবান তবু সকলের বিশেষ প্রিয় বেলঘরিয়ার দিশারী ভবন। এই প্রিয়তার কারণ হতে পারে এখান থেকে সাফল্যের উচ্চহার, হতে পারে এখানকার দীর্ঘ পরম্পরা অথবা RICE Education-এর কর্ণধার প্রফেসর (ড.) সমিত রায় মহাশয়ের সান্নিধ্যের আশ্বাস বা অন্যকিছু। কিন্তু যাই হোক না কেন এই দিশারী ভবন বেলঘরিয়ার একটি ল্যান্ডমার্ক, সরকারি চাকরির প্রস্তুতিতে এই বাড়িটি তার সুনাম ভবিষ্যতের দিকে আরও এগিয়ে নিয়ে চলেছে।
Published on Jul 23, 2024