WBCS প্রিলিমিনারি ২০২৩; শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি

WBCS প্রিলিমিনারি ২০২৩; শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি

সামনে WBCS পরীক্ষা, পরীক্ষার্থীরা নতুন উদ্যমে শুরু কর পরীক্ষার প্রস্তুতি। প্রথমে WBCS প্রিলিমস, ২০২৩-এর পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল এই বছর মার্চ-এপ্রিল মাসে। তারপর সেটা পিছিয়ে জুন-জুলাই হয়। সম্প্রতি জানানো হয় ৬ নভেম্বর WBCS প্রিলিমস পরীক্ষা হবে। কিন্তু, দিন ঘোষণার কয়েকদিনের মধ্যেই সেটা বাতিল হয়ে যায়। অনেক অনিশ্চয়তার পর শেষ পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস কমিশন ঘোষণা করেছে WBCS প্রিলিমস পরীক্ষার দিন। আগামী ১৬ ডিসেম্বর, শনিবার অনুষ্ঠিত হতে চলেছে WBCS প্রিলিমস পরীক্ষা। সম্ভবত পরীক্ষার ৫-৭ দিন আগে ই- অ্যাডমিট কার্ড ডাউনলোড করে নিতে হবে কমিশনের ওয়েবসাইট wbpsc.gov.in থেকে। এ বিষয়ে WBPSC- র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে আরও বিস্তারিতভাবে জানা যাবে।

সুতরাং পরীক্ষার তারিখ নিয়ে উদ্বেগের দিন শেষ, এবার শুরু নিখুঁত প্রস্তুতির পালা। পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা রাজ্যের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ নিয়োগ পরীক্ষাগুলির মধ্যে অন্যতম। প্রতিবছর বিপুল সংখ্যক মেধাবী প্রার্থী এই পরীক্ষায় বসে রাজ্য প্রশাসনের অংশ হওয়ার জন্য। সুতরাং বলাবাহুল্য এখানে প্রতিদ্বন্দ্বিতা উচ্চ স্তরের। এই পর্যায়ের পরীক্ষার চৌকাঠ পার হওয়ার জন্য পরীক্ষার্থীকে হতে হবে কঠোর পরিশ্রমী এবং তুখোর বুদ্ধিমান। সে পরিশ্রমের দ্বারা পাঠ্য আয়ত্ত করবে আর বুদ্ধি প্রয়োগ করবে স্মৃতিকে সজাগ রাখতে।

শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয়

পরীক্ষার দোরগোড়ায় দাঁড়িয়ে নতুন কিছু পড়ার থেকেও প্রাধান্য দিতে হবে রিভিশনকে। মানুষের স্মৃতি সমুদ্রসৈকতের মত, ঢেউ এসে মুছে দেয় পদচিহ্ন। নতুন ঘটনা পুরনো স্মৃতিকে মুছে দেয়। কাজেই নতুন বিষয় পড়লে আগের পড়াটা মনে অস্পষ্ট হয়ে যেতে পারে। স্মৃতিকে সজাগ রাখতে তাই একটাই উপায়-বারবার পড়া অর্থাৎ রিভিশন। এইসময় পরীক্ষার্থীদের উচিত কেবল গুরুত্বপূর্ণ বই ও মেটেরিয়াল পড়া এবং সেগুলিকে একাধিকবার রিভিশন করা।

  • রিভিশন

বিষয়বস্তুকে গভীরভাবে বোঝার জন্য রিভিশন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বারবার পড়লে এবং লিখলে সেই স্মৃতি দীর্ঘস্থায়ী হয়। ফলে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে আসে। রিভিশন দেওয়ার সময় দেখা যায় স্বতস্ফূর্তভাবে সব মনে পরে যাচ্ছে- তখন পরীক্ষার ভয় কেটে গিয়ে আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়। সাধারণত পড়াশোনাকে একটা রুটিনে ভাগ করে নিলে সুবিধা হয় শিক্ষার্থীদের, তারা হয়তো সপ্তাহে দুই বা তিন দিন রিভিশনের জন্য রাখে। কিন্তু, মনোবিজ্ঞানসম্মত উপায় হল একটা বিষয় পড়ার পর তাকে বিশ্রাম দেওয়া, অন্য কোন বিষয় পড়া। তারপর কয়েক ঘন্টা পড়ে প্রথম রিভিশন দেওয়া। এর পরের রিভিশন দুদিন পর এইভাবে সময়ের ব্যবধান বাড়িয়ে ৪ থেকে ৫ বার রিভিশন দিতে হবে। একই বিষয় ঘন ঘন পড়ার ফলে মনে রাখার ক্ষমতা বাড়বে আর ভুলের সম্ভাবনাও কমবে। প্রথম প্রথম একটু কঠিন মনে হলেও রিভিসন যত বেশি হয় মস্তিষ্কে বিষয়টা তত সুস্পষ্ট হতে থাকে।

  • স্মৃতির টোটকা

এসময় সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী একটা নিজস্ব নোটবুক। কোন বিষয়কে সহজে মনে রাখার জন্য নোটবুকের একটি পাতায় বিষয়ের শিরোনাম লিখে তার ভিতরের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি পয়েন্টের আকারে লিখে রাখতে হবে। পরীক্ষার ঠিক আগে এই তথ্যগুলি একবার দেখে নিলেই সব মনে থেকে যায়। মনোবিজ্ঞানের ভাষায় একে মাইন্ড ম্যাপিং বলা হয়। কিছু মেমরি হুকও ব্যহার করা ফলপ্রসূ, যেমন একটা বিষয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ আর একটি বিষয়কে মনে রেখে কোন সাল তারিখ, নাম বা ঘটনা মনে রাখা। এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত মনে রাখার কৌশল, তাই এটা আর সকলের থেকে আলাদা। ইতিহাসের সাল, গুরুত্বপূর্ণ গাণিতিক সূত্র, সংবিধানের আর্টিকেল, পরিসংখ্যান, অর্থনৈতিক তথ্য ইত্যাদির মতো কয়েকটি বিষয় মুখস্ত করা কঠিন, এগুলি ঘনঘন রিভিসন প্রয়োজন। বিভিন্ন রঙ এবং হরফ ব্যবহার করে এগুলো চার্টের আকারে লিখে দেওয়ালে বা পড়ার টেবিলের সামনে আটকে রাখা ভাল যাতে প্রতিদিন এগুলো চোখের সামনে ফুটে ওঠে আর মনে গাঁথা হয়ে যায়। কোন বিষয়ে রেফারেন্স হিসেবে দুই বা ততোধিক বইয়ের সাহায্য নিলে অবশ্যই নিজস্ব নোটবুকে চার্ট করে রাখতে হবে, যে একটি নির্দিষ্ট টপিক পড়ার জন্য কোন বইটির সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। এইভাবে সময়কে সুচারুভাবে ব্যবহার করে রিভিসন হবে সুপরিকল্পিত।

  • মকটেস্ট

যেহেতু পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার বেশির ভাগ প্রশ্নই MCQ প্রকৃতির, তাই এই পর্যায়ে এসে প্রচুর MCQ সমাধান এবং বারবার ভুল সংশোধন করতে হবে। প্রিলিমিনারি ও মেইন পরীক্ষার আগে মকটেস্ট দেওয়া এবং বিগত বছরের পেপার সল্‌ভ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন অন্তত একটি মকটেস্ট দিয়ে তার ঠিক-ভুলগুলো সংশোধন করে নিজেকে আরও পরিমার্জিত ও শানিত করে তুলতে হবে।

  • বিশ্রাম

সামনে পরীক্ষা থাকলে বাবা মায়েরা বলেন, “আদা-জল খেয়ে লেগে থাক” তার মানে কিন্তু এই না যে নাওয়া খাওয়া বিসর্জন দিয়ে রাতদিন পড়তে হবে। বরং এই সময়ই বিশ্রাম বেশি করে প্রয়োজন। তা না হলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়বে আর স্মৃতির কোন টোটকাই কাজে লাগবে না। পর্যাপ্ত ঘুম, ঘরোয়া খাবার এবং সম্ভব হলে পরীক্ষার উদ্বেগ কাটানোর জন্য মেডিটেশন বা হালকা সঙ্গীতের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে। পড়তে পড়তে অনেক সময় ক্লান্তিতে শরীর ভেঙে পড়তে চায়, তখন শরীরের উপর জোর না খাটিয়ে একটু শোওয়া দরকার, এবং এক্ষেত্রে কিন্তু দেখা গেছে ১০-১৫ মিনিটের একটু তন্দ্রাই আবার সতেজ করে তোলে। নিজেকে টার্গেট দেওয়া – ‘এই পড়াটা তৈরি হয়ে গেলে বা এই মকটেস্টটা সময়ে শেষ করতে পারলে সাইকেল নিয়ে একপাক ঘুরে আসব’- তারপর সেই কথা রাখা এই সবকিছুই পরীক্ষার সময় একঘেয়েমি কাটাতে এবং নিজেকে উদ্বুদ্ধ করে রাখতে কাজে লাগবে।

পরিশেষে বলতেই হয়, পরিশ্রমই সাফল্যের চাবিকাঠি।  WBCS প্রিলি পরীক্ষা সফল জীবনের প্রথম চৌকাঠ, তাকে পার করতে হবেই, এই মূলমন্ত্রই পরীক্ষার্থীদের শক্তি দেবে প্রস্তুতির শেষ কয়েকটা দিন।

 

 

 

Published on May 10, 2024