উৎসবের আনন্দের পাশাপাশি চলুক পরীক্ষার প্রস্তুতি

“আশ্বিনে নব আনন্দ, উৎসব নব।” এই উৎসব বাঙালীর প্রাণের উৎসব, উজ্জ্বলতার উৎসব! সারা বছর যে আনন্দমুখরতার জন্য উন্মুখ হয়ে থাকে বাংলার মানুষ সেই দুর্গাপূজা আজ আমাদের দুয়ারে। পুজোর কেনাকাটা, অষ্টমীর অঞ্জলি, নতুন জামাকাপড়ের গন্ধ, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা, প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘুরে ঠাকুর দেখা সেইসঙ্গে পেটপুজো… পুজোর আনন্দের কথা বলে শেষ করা যাবে না। তবে এই আনন্দের স্রোতে গা ভাসিয়ে পরীক্ষার কথা কিন্তু সম্পূর্ণ বিস্মৃত হওয়া চলবে না। কারণ, স্কুল-কলেজের দিনগুলো কাটিয়ে এসে এখন জীবনে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার লড়াই- এই সময়টাই জীবনের সবচেয়ে কঠিন মুহূর্ত!    

  • কঠিন কেন? 

প্রথমত, চাকরির পরীক্ষার পড়াশুনা প্রথাগত পড়াশুনার চেয়ে অনেক বেশি মনযোগ দাবি করে। কারণ চাকরির পরীক্ষার পড়াশুনা অনেক বেশি গভীর- অনেক বেশি বিষয়ে পারদর্শীতা অর্জন করতে হয়। নিজেকে দক্ষ করে তুলতে হয় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে সঠিক উত্তর দেওয়ায়। ভুল করে শেখার কোন জায়গা নেই এখানে। প্রস্তুতিতে ঢিলে দেওয়ার বা এড়িয়ে চলার অর্থ নিজের লক্ষ্যকেই অগ্রাহ্য করা। এখন জীবনের সেই পর্ব যখন কেউ তোমাকে ধরেবেঁধে পড়াতে বসাবে না, নেই কোন চোখরাঙানির ভয়। আসলে এই হল সময় নিজেকে কঠিন অনুশাসনে বাঁধার, আত্মনিয়ন্ত্রণের। ‘তপস্যা’র অন্য অর্থ যদি হয় কৃচ্ছসাধন তবে একনিষ্ঠ পড়াশুনাই হচ্ছে ছাত্রদের তপস্যা— ‘ছাত্রানাং অধ্যয়নং তপঃ’!  

  • সামনে আছে যেসব পরীক্ষাঃ 

সবার প্রথমে উল্লেখ করতে হয় সেইসব পরীক্ষার কথা যেগুলোর ফর্মফিলাপ ইতিমধ্যে হয়ে গেছে! যেমন, West Bengal Public Service Commission-এর অধীনে Food SI পদে ২০২৩ সালের নিয়োগের জন্য ফর্ম ফিল আপ হয়ে গেছে সেপ্টেম্বর মাসেই। সুতরাং যারা এই পরীক্ষাটির জন্য আবেদন করেছো তাদের শিয়রে সংক্রান্তি, প্রস্তুতিতে এতটুকু ঢিলে দেওয়ার যো নেই। আবার ডিসেম্বর মাসেই অনুষ্ঠিত হতে চলেছে WBTET পরীক্ষা। রাজ্যের বহু শিক্ষার্থী এই পরীক্ষাটির জন্য অপেক্ষা করে থাকে। পরীক্ষাটি যথেষ্ট কঠিন এবং এর প্রস্তুতিও হওয়া উচিত ততটাই নিখুঁত। আছে WBPSC Miscellaneous-এর প্রিলিমিনারি পরীক্ষা, যার আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে ৫ অক্টোবর ২০২৩ থেকে।  PSC Clerkship পরীক্ষার নোটিফিকেশন প্রকাশিত হয়েছে, আবার স্টাফ সিলেকশন কমিশনের GD Constable–এর শূন্যপদের বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে। ৪৫২৮৪টি শূন্যপদে নিয়োগের জন্য আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হবে ২৪ নভেম্বর ২০২৩ থেকে। সচরাচর আমাদের কানে আসে ‘সরকারি চাকরি আর কোথায়’ এই ধরণের হতাশাব্যঞ্জক কথা। অথচ বিজ্ঞপ্তি তো নিয়মিত প্রকাশিত হয়! পরীক্ষা মানেই একটা সুযোগ। আর নিশ্চিন্ত জীবনের হাতছানি দেওয়া এমন সুযোগকে কোনভাবেই হেলায় হারানো চলে না। 

  1. তবে কি পুজো কাটবে একাকীত্বে? 

পুজোর মুখে পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি আশার আলো- মনখারাপের কারণ নয়! সবার প্রথমে মনকে বোঝাতে হবে ‘আমি একা নই, আমার মত আমার বয়সী কয়েক লক্ষ যুবক-যুবতী প্রস্তুত হচ্ছে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য’। এ তো আরও এক মহোৎসব! কেবলমাত্র যোগ্য ও উচ্চাকাঙ্ক্ষীরাই এই মহোৎসবে শামিল হতে পারে! সুতরাং মনখারাপ নয় বরং এই বিচ্ছিন্নতাকে গ্রহণ করতে হবে দেবী সরস্বতীর প্রসাদ রূপে। পড়াশুনায় ছেদ পড়তে দেওয়া যাবে না। ঠাকুর দেখা তো থাকছেই, না হয় দিনের বেলা পড়াটা করে নিয়ে রাত্রে প্যান্ডেলে ঘোরা হল। নাহয় এবছর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাটা বিজয়া দশমীর দিনে বাড়িতেই সারা গেল। পড়াশোনা একটানা নাহয় নাই বা হল, বিরতিও মাঝে মধ্যে মনযোগকে একাগ্র করে তোলে। কিন্তু আনন্দের জোয়ারে বয়ে যাওয়া চলবে না, বইখাতা শিকেয় তুলে রাখা চলবে না। প্রত্যেক দিনের প্রস্তুতির রুটিন বজায় রাখতে হবে, নইলে পুজো চলে গেলেও আলস্যের রেশ কাটবে না বহুদিন।  

                    এসবই ছোট ছোট টীপস্‌ উৎসবের দিনগুলিতে পড়াশুনার সংস্পর্শ বজায় রাখার জন্য। এবছরের প্রার্থনা হোক নিজের যোগ্যতাকে যেন সঠিক মর্যাদা দিতে পারি আমরা। পুজোর অর্থই বা কি কাজী নজরুলের ভাষায়- ‘এই পূজাবিলাস সংহার করো যদি পুত্র শক্তি নাহি পায়’। শুধু ‘পুত্র’ই নয়- মায়ের কাছে আমাদের প্রার্থনা তোমার পুত্র-কন্যা সকলেই হোক আত্মশক্তিতে শক্তিশালী, নিজ যোগ্যতায় জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত- ‘মাগো, চিন্ময়ী রূপ ধরে আয়…’