WBCS-এ ভূগোলের গুরুত্ব

বিগত 38 বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শিক্ষাবিদ, রাইস গ্রুপের কর্ণধার এবং অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রফেসর (:) সমিত রায়ের নেতৃত্বে প্রায় 200 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা 100 জনেরও বেশি শিক্ষাকর্মীর নিরলস তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের কয়েক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়ে আজ কর্মরত RICE গ্রুপের 15 বছরের অভিজ্ঞ ভূগোলের শিক্ষক অরিত্র নায়ক, যার হাত ধরে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী সফল হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায়। আজ তার কলম থেকে জেনে নেওয়া যাক WBCS পরীক্ষায় ভূগোলবিষয়টির গুরুত্ব।

 

পশ্চিমবঙ্গ পাবলিক সার্ভিস কমিশন দ্বারা আয়োজিত WBCS পরীক্ষাটি রাজ্যের সকল চাকরিপ্রার্থীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয়। এই পরীক্ষার মাধ্যমে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন দপ্তরে আমলা ও উচ্চপদস্থ প্রশাসনিক কর্মী নিয়োগ করা হয়ে থাকে। এই পরীক্ষাটি সাধারণত তিনটি পর্যায়ে হয়ে থাকে অর্থাৎ প্রিলিমিনারি, মেইন এবং পার্সোনালিটি টেস্ট এবং প্রতিটি ধাপেই বিভিন্ন বিষয় থেকে নানান ধরনের প্রশ্ন করা হয়ে থাকে পরীক্ষার্থীদের। WBCS পরীক্ষায় যে বিভিন্ন বিষয়গুলি থেকে প্রশ্ন করা হয়ে থাকে তার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল ভূগোল। প্রিলিমিনারি থেকে পার্সোনালিটি টেস্ট, প্রতিটি স্তরেই ভূগোল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আজ জেনে নেওয়া যাক WBCS পরীক্ষায় ভূগোল বিষয়ের গুরুত্ব এবং বিষয়টি থেকে ভালো নম্বর তোলার সঠিক দিশা।

 

WBCS পরীক্ষায় ভূগোল বিষয়টি বিভিন্ন কারণে গুরুত্বপূর্ণ। কারণগুলি খুব সংক্ষেপে আলোচনার মাধ্যমে তোমাদের কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

  • ভূগোল বিষয়টির সাহায্যে আমরা জানতে পারি—যেকোনো জায়গার অবস্থান, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। এই সকল বিষয়গুলি না জানা থাকলে সরকারি বিভিন্ন পরিকল্পনার প্রণয়ন ও রূপায়ণ যথাযথভাবে সফল করে তোলা সম্ভব হয় না। আর সেই কারণেই এই পরীক্ষার তিনটি স্তরেই অর্থাৎ প্রিলিমিনারি, মেইন এবং পার্সোনালিটি টেস্ট—ভূগোল বিষয়টি অপরিহার্য।
  • প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য 25টি MCQ এবং মেইন পরীক্ষার জন্য 100টি MCQ ভূগোল বিষয়ের ওপর থাকে। যদিও লক্ষ করা যায় প্রিলিমিনারি পরীক্ষায় 25টি প্রশ্ন বরাদ্দ থাকলেও প্রায় প্রত্যেক বছরই 27 থেকে 28টি করে প্রশ্ন ভূগোল থেকে করা হয়ে থাকে যার মধ্যে প্রায় 10-12টি প্রশ্ন পশ্চিমবঙ্গের ভূগোলকেন্দ্রীক হয়ে থাকে। মেইন পরীক্ষার ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের ভূগোল দুটি অংশ থেকেই প্রশ্ন করা হয়ে থাকে, তাই পশ্চিমবঙ্গের ও ভারতের ভূগোল উভয়ই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যদিও অনেক পরীক্ষার্থীর কাছে একটি ভুল ধারণা থাকে যে, পশ্চিমবঙ্গের ভূগোলটি হয়তো ভারতের ভূগোলের থেকে একটু বেশি গুরুত্বপূর্ণ—তা কিন্তু একেবারেই নয়। তাই পশ্চিমবঙ্গের ভূগোল ও ভারতের ভূগোল—দুটি Topic-ই সমান গুরুত্ব দিয়ে তৈরি করা উচিৎ। পাশাপাশি পার্সোনালিটি টেস্ট-এর ক্ষেত্রে নিজের জেলা ও ব্লক সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে রাখা উচিৎ।
  • এছাড়া WBCS মেইন পরীক্ষার-এর ক্ষেত্রে যারা Group A ও B-এর প্রস্তুতি নেবে তাদের যেকোনো একটি Optional Subject অর্থাৎ ঐচ্ছিক বিষয় বেছে নিতে হয়, সেক্ষেত্রে ভূগোল বিষয়টি আরো কিছুটা ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। কারণ ঐচ্ছিক বিষয়ের দুটি পত্রে 200 × 2 = 400 নম্বর থাকে। আর তাই যারা ভূগোল বিষয়টিকে ঐচ্ছিক বিষয় হিসাবে বেছে নেয় তাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টির গুরুত্ব অন্যদের তুলনায় আরো কিছুটা বেশি।
  • পশ্চিমবঙ্গ ও ভারতের ভূগোলের যে চ্যাপ্টারগুলি থেকে প্রশ্নের সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হয় সেগুলি হল- নদ, নদী, ভূ-প্রকৃতি, রাজনৈতিক বিভাগ, সীমানা, বহুমুখী নদী পরিকল্পনা ও নদীবাঁধ, আদমসুমারি (Population Census) , খনিজ, শিল্প, পরিবহণ ব্যবস্থা, জলবায়ু, চাষাবাদ-প্রভৃতি। তবে এই চ্যাপ্টারগুলির কোন জায়গাগুলি WBCS পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ সেটা সঠিক ভাবে জেনে নিয়ে পড়াশোনা করা উচিৎ, নচেৎ অযথা অতিরিক্ত তথ্য সংগ্রহ করলে সেগুলো যেমন মনে রাখা দুষ্কর তেমনি বেশিরভাগ তথ্যই অপ্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।টেক্সট বই পড়ার পাশাপাশি ভূগোলের ক্ষেত্রে মানচিত্রের সাহায্য নিয়ে পড়া অত্যন্ত জরুরী। WBCS-এর প্রিলিমিনারি এবং মেইন উভয়ক্ষেত্রেই বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়ে থাকে যেখানে মানচিত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকলে উত্তর দেওয়া বেশ কঠিন। সুতরাং WBCS পরীক্ষার জন্য ভূগোলের প্রস্তুতি নেওয়ার সময় মানচিত্রের সাহায্য নেওয়া একান্ত প্রয়োজন। সেই জন্যই Proper guidance-এর খুব প্রয়োজন হয় এই পরীক্ষায় খুব সহজেই কৃতকার্য হওয়ার জন্য।

           

এই আলোচনায় আশা করি এটা স্পষ্ট হয়েছে যে ভূগোল বিষয়টি WBCS পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি কর্মরত অবস্থায় বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও বিভিন্ন পরিকল্পনার যথার্থভাবে রূপায়ণের ক্ষেত্রেও যথেষ্ট ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করে। সুতরাং এই বিষয়টিকে বাদ রেখে বা কম গুরুত্ব দিয়ে WBCS পরীক্ষায় কৃতাকার্য হওয়া এবং কর্মরত অবস্থায় থেকে সঠিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা এককথায় অসম্ভব।