WBCS পরীক্ষার প্রস্তুতি তে জীববিদ্যা ও পরিবেশ বিদ্যার গুরুত্ব

বিগত 38 বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শিক্ষাবিদ, রাইস গ্রুপের কর্ণধার এবং অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রফেসর (ড:) সমিত রায়ের নেতৃত্বে এবং প্রায় 200 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও 100 জনেরও বেশি শিক্ষাকর্মীর নিরলস তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের কয়েক লক্ষ ছাত্রছাত্রী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়ে আজ কর্মরত। RICE গ্রুপের 8 বছরের অভিজ্ঞ জীববিদ্যা ও পরিবেশবিদ্যার শিক্ষক রোহিত পাল, যার হাত ধরে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী সফল হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায়। আজ তাঁর কলম থেকে জেনে নেওয়া যাক WBCS পরীক্ষায় ‘জীববিদ্যা ও পরিবেশবিদ্যা’ বিষয় দুটির গুরুত্ব।

WBCS পরীক্ষার প্রস্তুতি তে জীববিদ্যা পরিবেশ বিদ্যার প্রয়োজনীয়তা

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, WBCS প্রিলিমিনারি ২০২৩ এবং WBCS মেইন ২০২২-এর পরীক্ষা দোরগোড়ায়। এই সময়টা তোমাদের প্রত্যেক পরীক্ষার্থীদের জন্য ভীষণ ভাবেই গুরুত্বপূর্ণ। একইসঙ্গে প্রিলিমিনারি এবং মেইন-এর প্রস্তুতি নেবার একদমই উপযুক্ত সময় এটা। অর্থাৎ, সম্পূর্ণ সিলেবাসকে কভার করার একটা যে দারুণ স্পেস, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহের অবকাশ নেই। ছাত্রছাত্রীরা, তোমরা যারা অনেকবার পরীক্ষায় বসেছো তাদের নিশ্চয়ই সিলেবাস সম্পর্কে একটা ধারণা আছে। কিন্তু যারা নতুন পরীক্ষা দেবে তাদের কাছে সিলেবাস একটা সমুদ্রের মতন মনে হতে পারে। এই জায়গা থেকে নিজের স্বপ্নকে ভয় পেয়ে ত্যাগ করে অনেকেই। কিন্তু নতুন যারা পরীক্ষা দেবে, তাদের জন্য বলব, সিলেবাস দেখে ঘাবড়ানোর বা ভয় পাবার কোনো কারণ নেই। ঠিক ভাবে প্ল্যান করে একটা একটা করে অংশ শেষ করে নিয়মিত অভ্যাস করলে সাফল্য মিলবে ঠিকই। তারসাথে অধ্যবসায় এবং ধৈর্য্য এই দুটি জিনিসও থাকা চাই। পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস অনেকের কাছেই একটি স্বপ্ন, প্রায় আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতনই। আর এটি এমনি একটি পরীক্ষা যেখানে বিভিন্ন বিভাগ থেকে ছাত্রছাত্রীরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে থাকে। এই বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলব, দশম শ্রেণির পর যারা বাণিজ্য বা কলা বিভাগ এ পড়াশোনা করে থাকে তাদের কাছে জেনারেল সায়েন্স এর বিষয়টি কিছুটা হলেও চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়ায়। তাই আজ কথা বলব জেনারেল সায়েন্স এবং তার মধ্যে একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জীববিজ্ঞান এবং পরিবেশবিদ্যা নিয়ে। ঠিক কোন কোন অধ্যায়গুলো পড়তে হবে এবং কীভাবে অনুশীলন করলে ভালো স্কোর করে আসতে পারবে সেই বিষয়ে আশা রাখি এই প্রতিবেদন কিছুটা হলেও তোমাদের সাহায্য করবে।

পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস পরীক্ষা তিনটি ধাপে বিভক্ত। প্রথমটি হল প্রিলিমিনারি, দ্বিতীয়টি হল মেইন এবং পরবর্তী ধাপ হল ইন্টারভিউ। এক্ষেত্রে আমাদের প্রিলিমিনারি এবং মেইন দুটোর ক্ষেত্রেই জীববিদ্যা এবং পরিবেশবিদ্যা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অনেকের একটা এমন ধারণা কাজ করে যে, পরিবেশবিদ্যা হয়তো প্রিলিমিনারি পরীক্ষার জন্য খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কিন্তু বলব, গত কয়েকবছর ধরে প্রশ্নের ধরণ এমন ভাবেই হচ্ছে যেখানে পরিবেশবিদ্যাকে প্রিলিমিনারির জন্য অবহেলা করার খুব একটা অবকাশ নেই। প্রস্তুতি এমনভাবেই নিতে হবে যাতে করে প্রথম থেকেই প্রিলিমিনারি এবং মেইন সবটাই একসাথে কভার করে নিতে পারো। তবেই কিন্তু তুমি অন্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকবে অনেকটাই। আর যেভাবে দিনের পর দিন কাট অফ মার্কস বেড়ে চলেছে তাতে করে এক্সট্রা অ্যাডভান্টেজ পেতে এরকম ভাবে মানসিকতা তৈরি করে নেওয়া প্রস্তুতির একদম প্রথম পর্যায় থেকেই দরকার। 

প্রথমেই বলি, প্রিলিমিনারির জন্য সাধারণ বিজ্ঞান থেকে বরাদ্দ থাকে ২৫ নম্বর। সেখানে পদার্থবিদ্যা, জীববিদ্যা, রসায়ন সব বিষয় থেকেই প্রত্যেকবছর ঘুরিয়ে ফিরিয়ে নানাবিধ প্রশ্ন আসে। এক্ষেত্রে কোনো নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই তবে অভিজ্ঞতা থেকে বলতেই পারি—গড়ে জীববিদ্যা থেকে ৭ থেকে ১০, পরিবেশবিদ্যা থেকে ২-৩ নম্বর থাকতে পারে। কোনো কোনো বছর এই  সংখ্যার হিসেব আবার নাও মিলতে পারে। তাই সাজেশন করে পড়ার কোনো জায়গাই নেই। মানে তুমি জীববিদ্যা বেশি গুরুত্ব দিয়ে পড়ে গেলে আর দেখলে সর্বাধিক প্রশ্ন এসেছে পদার্থবিদ্যা বা রসায়ন থেকে। এখানেই স্কুল বা কলেজ এর পড়াশোনার সাথে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার পার্থক্য। অন্যদিকে, মেইন্স পরীক্ষার ক্ষেত্রে জেনারেল স্টাডিজ চতুর্থ পত্রে জীববিদ্যা এবং পরিবেশবিদ্যার প্রশ্ন থাকে। গত কয়েকবছর ধরে আসা মাল্টিপল চয়েস প্রশ্নের সংখ্যা থেকে বলতেই পারি, মেইন-এ জীববিদ্যা থেকে গড়ে ২০-২৫টি আবার পরিবেশবিদ্যা থেকে গড়ে ৪০-৪৫টি প্রশ্ন সাধারণত থাকতে পারে। আর এখানেই হয় আসল প্রতিযোগিতা।অবহেলা করার দরুন একটি বা দুটি নম্বরের জন্য পিছিয়ে পড়ার বাস্তব অভিজ্ঞতা যে কতখানি কঠিন তা যার হয়েছে সেই জানে। পরিবেশবিদ্যা বিষয়টির সাথে অনেক বিষয় যেমন জীববিদ্যা, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, ইতিহাস, ভূগোল, পলিটি এবং সাধারণ জ্ঞান এগুলির একটি নিবিড় যোগাযোগ রয়েছে। তাই এই সমস্ত বিষয়গুলির নানামুখী দিকগুলো থেকেও তথ্য সংগ্রহে রাখতে হবে অনুশীলনের সময়।

জীববিদ্যা থেকে পড়তে হবে যে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলি তা হল— কোশবিদ্যা, কলা, বংশগতিবিদ্যা, সালোকসংশ্লেষ, বাষ্পমোচন, অভিব্যক্তি ও অভিযোজন, জৈবপ্রযুক্তি, উদ্ভিদ ও প্রাণী জগৎ, বিভিন্ন অণুজীব ও তাদের দ্বারা সৃষ্ট রোগ, মানব শারীরবিদ্যা,  অর্থকরী উদ্ভিদ ও প্রাণীবিদ্যা এবং উদ্ভিদ অঙ্গসংস্থান। এ প্রসঙ্গে বলব, মানব শারীরবিদ্যা বিষয়টির পরিধি অনেক অর্থাৎ এর মধ্যে রয়েছে কঙ্কাল তন্ত্র, রক্ত ও সংবহন তন্ত্র, পুষ্টি, শ্বসন, রেচন, হরমোন, জনন, স্নায়ুতন্ত্র, জ্ঞানেন্দ্রিয় ইত্যাদি। এগুলি তোমরা প্রত্যেকেই মাধ্যমিক বা দশম স্তরে পড়েছো। তাই প্রস্তুতির সময় নবম ও দশম শ্রেণির সিলেবাস ভালোভাবে দেখে নিলে মনে অনেকটাই সাহস পাওয়া যাবে।

অন্যদিকে, পরিবেশবিদ্যা থেকে পড়তে হবে পরিবেশের উপাদান, খাদ্যশৃঙ্খল, খাদ্যজাল, বাস্তুতান্ত্রিক পিরামিড, বায়োম, সাকসেশন্ বা পর্যায়ক্রম, পরিবেশগত প্রভাবক, মৃত্তিকা এবং মৃত্তিকার প্রকারভেদ, জৈব ভূ-রাসায়নিক চক্র, বিভিন্ন ধরনের দূষণ, জলবায়ু পরিবর্তন, জীব বৈচিত্র্য ও তার সংরক্ষণ, প্রাকৃতিক সম্পদসমূহ, স্থিতিশীল উন্নয়ন, বিভিন্ন পরিবেশ আইন, বিভিন্ন প্রোটোকল, সামিট—সেগুলি কবে থেকে প্রণয়ন হয়েছে বা কী তার উদ্দেশ্য এইগুলি। সর্বোপরি, আরও একটি বিষয় মাথায় রাখতে হবে যে পরিবেশজনিত বিভিন্ন সাম্প্রতিক ঘটনাবলী থেকেও কিন্তু আমরা অনেক প্রশ্নই পাই। তাই পরীক্ষার আগে গত ছয় মাসের সাম্প্রতিক ঘটনাবলী দেখে যেতে পারলে ভালো হয়। এগুলি পড়ার পাশাপাশি নিয়মিত অনুশীলন, মক টেস্ট দেওয়া, বিগত বছরের প্রশ্নগুলিকে খুব ভালোভাবে বারবার করে অভ্যাস করতেই হবে। তাহলেই মোটামুটিভাবে এই অংশ থেকে প্রায় ৮৫-৯০ শতাংশই তোমরা কমন পাবে। এরপর যারা উত্তীর্ণ হবে তাদের অপশনাল বিষয় বা স্নাতক স্তরের পাঠ যদি জীববিদ্যা বিষয়ক বা পরিবেশবিদ্যা সংক্রান্ত কোনো বিষয় থেকে হয়ে থাকে তাহলে সেই সিলেবাস পড়তে হবে যত্ন সহকারেই। তবেই ইন্টারভিউ-এর বৈতরণী অতিক্রম করা যাবে সহজেই। আশা করি তোমাদের একটা ধারণা দিতে পারলাম। ভালো থেকো সবাই, মন দিয়ে অধ্যয়ন করো, সফলতার চাবিকাঠির সুপ্ত সন্ধানের হদিশ তোমরা যেন সহজেই পাও, এই আশাই রাখি। শুভকামনা রইল সকলের জন্য।