WBCS পরীক্ষার প্রস্তুতি তে পদার্থবিদ্যার গুরুত্ব

বিগত 38 বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শিক্ষাবিদ, রাইস গ্রুপের কর্ণধার এবং অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রফেসর (ড:) সমিত রায়ের নেতৃত্বে ও প্রায় 200 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা ও 100 জনেরও বেশি শিক্ষাকর্মীর নিরলস তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের কয়েক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়ে আজ কর্মরত। RICE গ্রুপের 10 বছরের অভিজ্ঞ পদার্থবিদ্যার শিক্ষক কল্যাণ ঘোষ, যার হাত ধরে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী সফল হয়েছেন বিভিন্ন সরকারি চাকরির পরীক্ষায়। আজ তাঁর কলম থেকে জেনে নেওয়া যাক WBCS পরীক্ষায় ‘পদার্থবিদ্যা’ বিষয়টির গুরুত্ব।

WBCS পরীক্ষার প্রস্তুতি তে পদার্থবিদ্যার প্রয়োজনীয়তা

প্রিয় ছাত্রছাত্রীরা, আশা করি আসন্ন WBCS পরীক্ষার জন্য তোমরা প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছো। পশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ স্তরের সরকারি চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়া খুব একটা সহজ নয়। সঠিক পরিকল্পনামাফিক পড়াশোনা একজন ছাত্র বা ছাত্রীর আত্মবিশ্বাস অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়, যা কিনা সফলতার দিকে তাকে আরও এগিয়ে রাখে। সঠিক নিয়মানুবর্তিতা মেনে প্রস্তুতি নিলে সাফল্য আসবেই। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা দেখেছি, প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে গেলে কঠিন পরিশ্রমই যথেষ্ট নয় তার সাথে দরকার পরিকল্পনামাফিক অনুশীলন ও গাইডেন্স। বিষয়টি সম্পর্কে সঠিক ধারণা তৈরি করা যেমন দরকার তার সাথে প্রয়োজন প্রশ্নপত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা।

আজকে আমরা পদার্থবিদ্যা সম্পর্কে  তোমাদের কাছে আলোচনা করব। তোমরা জানো WBCS পরীক্ষাটি তিনটি স্তরে নেওয়া হয়। প্রিলিমিনারী, মেইন ও ইন্টারভিউ। প্রিলিমিনারিতে কমবেশি দশটি প্রশ্ন থাকে আর মেইন পরীক্ষায় কমবেশি ত্রিশটি প্রশ্ন থাকে। তবে এর ব্যতিক্রম আমরা দেখেছি, তাই ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলব বিষয়টি ভীষণ খুঁটিয়ে পড়তে হবে। যাতে বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ভালোভাবে তৈরি হয়। এবারে আসা যাক প্রশ্নের ধরন নিয়ে—প্রশ্নপত্র বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাব প্রশ্নগুলি মূলত দুভাবে আসে। প্রিলিমিনারিতে কিছু প্রশ্ন আসে পুরোপুরি থিওরিটিক্যাল অর্থাৎ শুধু তথ্য জানলেই হয়ে যাবে। যেমন—নিউটনের কোন সূত্রে বলের সংজ্ঞা পাওয়া যায় বা লাল আলো কেন বিপদ সংকেত হিসাবে ব্যবহার করা হয়। শেষ ছয় বছরের প্রিলিমিনারির প্রশ্নপত্রে আমরা দেখেছি বেশ কিছু ছোটো ছোটো অঙ্ক আসছে। এই অঙ্কগুলি তাপ ও উষ্ণতা, তড়িৎবিজ্ঞান, শব্দবিজ্ঞান থেকে এসেছে। তাহলে প্রশ্নপত্রের ধরন থেকে যা বোঝাই যাচ্ছে—পদার্থের সাধারণ ধর্ম, তাপ ও উষ্ণতা, আলোকবিজ্ঞান, শব্দবিজ্ঞান, চৌম্বক ধর্ম, তড়িৎবিজ্ঞান, অর্ধপরিবাহী এই অধ্যায়গুলো তোমাদের ভালোভাবে পড়তে হবে।

এবার আসি মেইন পরীক্ষার বিষয়ে। তোমরা বুঝতেই পারছো প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যারা পাশ করবে তারা স্বভাবতই একটি অন্যতম কঠিন স্তর অতিক্রম করে আসবে। কাজেই মেইন পরীক্ষার প্রশ্ন কিছুটা হলেও কঠিন হয়। এই পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা বিষয়টিতে যেমন সাধারণ জ্ঞান রাখতে হবে তেমনই গভীরে গিয়ে পড়তে হবে। বর্তমানে যে প্রযুক্তিগুলি আমরা ব্যবহার করছি তার পিছনে যদি পদার্থবিদ্যার কোনো থিওরি থাকে, তাহলে সেটিকে আমাদের জানতে হবে। প্রতিবছর পদার্থবিদ্যায় নোবেল দেওয়া হয়। কোন বিষয়ে নোবেল দেওয়া হল সেই বিষয়টি সম্পর্কে তোমাদের সাধারণ জ্ঞান রাখতেই হবে। বিষয়টি গভীরে অনুশীলন না করলে পরীক্ষার হলে  কিন্তু সমস্যা হতে পারে। বিগত বছরের প্রশ্নের ধরন থেকে আমরা বলতে পারি আমাদের মূলত Application Oriented অংশগুলো ভালোভাবে অনুশীলন করতে হবে।

আলোকবিজ্ঞানে প্রতিসরণ-এর ব্যবহার, আভ্যন্তরীণ পূর্ণ প্রতিফলনের ব্যবহার, ব্যাতিচারের ব্যবহার, আলোকীয় যন্ত্ৰগুলি যেমন মাইক্রোস্কোপ ও টেলিস্কোপ। তড়িৎবিজ্ঞান থেকে আমরা ছোটো ছোটো অঙ্ক আসতে দেখেছি। বিশেষ করে এই ফর্মূলা থেকে নানারকম অঙ্ক এসেছে। Voltmeter, Ammeter, Fuse wire-এর গঠন ও ব্যবহার এই অংশগুলি ভালোভাবে পড়তে হবে। বিভিন্ন থার্মোমিটার ও তার ব্যবহার, যেমন সূর্যের তাপমাত্রা মাপার জন্য আমরা Pyrometer ব্যবহার করি আবার Blast Furnace-এর উষ্ণতা মাপা হয় Infrared Thermometer দিয়ে। বিভিন্ন কাজে বিভিন্ন ধরনের থার্মোমিটার ব্যবহৃত হয়। সেইগুলো তোমাদের জানতে হবে। LED, LASER, RADAR-এইগুলোর পুরো নাম এবং দৈনন্দিন জীবনে এগুলির ব্যবহার তোমাদের পড়তে হবে। এছাড়াও যে অংশগুলি বেশি করে পড়তে হবে সেগুলি হলো—‘বোসন কণা কী?’ ‘ফোটনের স্পিন কত?’ ‘রামন বিক্ষেপণ-এর উদাহরণ কী?’ ‘কুয়াশা সাদা হবার পিছনে কোন বিক্ষেপণ কাজ করে?’ ‘যদি ব্যাতিচার পরীক্ষায় সাদা আলো ব্যবহার করা হত তাহলে কী দেখা যেত?’—এইরকম প্রশ্ন বিগত বছরে পরীক্ষায় এসেছে।

তাই প্রশ্নপত্রের ধরন মাথায় রেখে আমাদের পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হবে। পাঠ্যপুস্তক মূলত পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অষ্টম থেকে দশম শ্রেণির বইগুলি খুঁটিয়ে পড়তে হবে প্রিলিমিনারির জন্য। NCERT-এর ক্লাস 9-12 এর বই পড়তে হবে মেইনের জন্য। তোমরা যারা ইংরেজি মাধ্যম থেকে পড়াশোনা করেছ তারা NCERT-এর ক্লাস 8-10 এর বইগুলো ভালো করে পড়বে। যখনই কোনো চ্যাপ্টার পড়বে প্রথমেই সেই চ্যাপ্টারের থিওরি এবং সেই থিওরি যে বিজ্ঞানীর দেওয়া সেগুলিকে আলাদা করে লিখে নেবে। এরপর ঐ চ্যাপ্টারের এককগুলোকে আলাদা করে নেবে। তাহলেই দেখবে পুরো জিনিসটা সহজ হয়ে যাবে পড়ার ক্ষেত্রে।

আশা করি এই আলোচনার মাধ্যমে তোমরা WBCS পরীক্ষায় পদার্থবিদ্যা বিষয়টির গুরুত্ব সম্পর্কে একটি সুস্পষ্ট ধারণা পেয়েছো। আসন্ন পরীক্ষার জন্য শুভেচ্ছা রইল। সকলের সাফল্য কামনা করি।