WBCS পরীক্ষার প্রস্তুতি তে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর গুরুত্ব

বিগত 38 বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গের অন্যতম শিক্ষাবিদ, রাইস গ্রুপের কর্ণধার এবং অ্যাডামাস বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর প্রফেসর (:) সমিত রায়ের নেতৃত্বে প্রায় 200 জন শিক্ষক-শিক্ষিকা 100 জনেরও বেশি শিক্ষাকর্মীর নিরলস তত্ত্বাবধানে পশ্চিমবঙ্গের কয়েক লক্ষ ছাত্র-ছাত্রী কেন্দ্রীয় রাজ্য সরকারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ চাকরির পরীক্ষায় সফল হয়ে আজ কর্মরত RICE গ্রুপের 10 বছরের অভিজ্ঞ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষিকা অনুরাধা বসু, যার হাত ধরে হাজার হাজার পরীক্ষার্থী সফল হয়েছেন বিভিন্ন সরকারী চাকরির পরীক্ষায়। আজ তাঁর কলম থেকে জেনে নেওয়া যাক WBCS পরীক্ষায় রাষ্ট্রবিজ্ঞানবিষয়টির গুরুত্ব।

WBCS পরীক্ষার প্রস্তুতি তে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এর প্রয়োজনীতা

জীবনে ডব্লু.বি.সি.এস.-এর মতো বড়ো চাকরির পরীক্ষার প্রস্তুতি শুরু করেছো বা করতে চাও? কিন্তু এই বিষয়টি কি জানা আছে?

ডব্লু.বি.সি.এস. পরীক্ষার প্রস্তুতির পর্বে ছাত্রছাত্রীদের যেসকল বিষয়গুলি পড়তে হয় সেগুলির মধ্যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান অন্যতম। ছাত্রছাত্রীরা বিষয়টি দুটি আঙ্গিকে পড়ার সুযোগ পায়—(ক) আবশ্যিক বিষয় হিসেবে (খ) ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে। যদিও আবশ্যিক বিষয় হিসেবে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টি সরাসরি পড়তে হয় না, তার একটি অংশ হিসেবে ভারতীয় সংবিধান (Indian Constitution & Polity) পড়তে হয়। তবে ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে যারা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়টি নেয় তাদের বিস্তারিত পড়তে হয়। পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার পূর্বে কয়েকটি ক্ষেত্র জেনে নেওয়া দরকার—

নম্বর বিভাজন

১) ডব্লু.বি.সি.এস. প্রিলিমিনারী পরীক্ষায় Indian Polity & Constitution থেকে ১০-১৫ নম্বর ধার্য করা থাকে।

২) ডব্লু.বি.সি.এস. মেইন পরীক্ষায় এই বিষয়টির জন্য ধার্য থাকে ১০০ নম্বর।

৩) ডব্লু.বি.সি.এস. অপশনাল পেপারে বিষয়টির জন্য ধার্য ৪০০ নম্বর।

প্রথম পত্র - ২০০ নম্বর, দ্বিতীয় পত্র - ২০০ নম্বর।

মূল আলোচনা ক্ষেত্র

১) আবশ্যিক বিষয়ে ইন্ডিয়ান পলিটি থেকে সংবিধানের প্রেক্ষাপট, মৌলিক অধিকার, রাষ্ট্রের নির্দেশমূলক নীতি, পার্লামেন্ট, রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, রাজ্য আইনসভা, রাজ্যপাল, মুখ্যমন্ত্রী, ভারতীয় বিচার ব্যবস্থা, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক, স্থানীয় স্বায়ত্তশাসন ব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশন, জরুরি অবস্থা, সংবিধান সংশোধন...ইত্যাদি বিভিন্ন টপিক সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখতে হবে।

২) ঐচ্ছিক বিষয়ে প্রথম পত্রে বিভিন্ন রাষ্ট্রতত্ত্ব (প্রাচ্য ও পাশ্চাত্য), রাজনৈতিক ধারণা, ভারতীয় সংবিধানের বেশ কিছু অংশ পড়তে হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সংবিধানের এই অংশে যা যা পড়তে হয় তার অনেকখানি আবশ্যিক বিষয়ে পলিটি পড়তে গিয়ে ছাত্রছাত্রীদের আয়ত্তে থাকে। দ্বিতীয় পত্রে জনপ্রশাসন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ে পড়তে হয়।

কতটা স্কোরিং?

অনেকেরই ধারণা থাকে পলিটি মানেই প্রচুর আর্টিকেল মুখস্থ করতে হয় এবং অপশনাল সাবজেক্টে পলিটিক্যাল সায়েন্সে খুব বেশি নম্বর পাওয়া যায় না।অপশনালে ইংরেজি মাধ্যমে লিখলে বেশি নম্বর পাওয়া যায় এমন কথাও ছেলেমেয়েদের মধ্যে ঘোরাফেরা করে। তবে এগুলি সবই ভ্রান্ত ধারণা। প্রথমত, পলিটিতে আর্টিকেল পড়তে হলেও কখনোই সব আর্টিকেল পড়তে হয় না এবং যতগুলি পড়তে হয় তা পড়ার নির্দিষ্ট কৌশল আছে। সেই কৌশল জানতে হবে। অপশনাল পলিটিক্যাল সায়েন্সের ক্ষেত্রে নম্বর শুধু ওঠেই না, একটি স্ট্যান্ডার্ড উত্তরপত্রে
৫৫%-৬০% নম্বর বা তার থেকে বেশি নম্বর পাওয়া দুঃসাধ্য ব্যাপার নয় যদি বিষয়টি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা থাকে, আর লেখার কৌশল জানা থাকে।ভাষা বা মাধ্যম সেখানে বিচার্য হয় না। ৪০০ নম্বরের অপশনালে ছেলেমেয়েরা ১০০ নম্বরের একটি অংশে আত্মবিশ্বাসী থাকে কারণ সেখানে ভারতীয় সংবিধানের ওপর প্রশ্ন আসে যা তারা আবশ্যিকেও পড়ে থাকে। সুতরাং অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় এই বিষয়টিকে আয়ত্তে আনা সহজ। তবে এখানেও ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য কয়েকটি কৌশল অনুসরণ করা প্রয়োজন। উল্লেখ করা দরকার যে রাষ্ট্রবিজ্ঞান এমন একটি বিষয় যা অপশনাল হিসেবে যে কোনো বিভাগে স্নাতক হলেই রাখা যায়।

প্রস্তুতির সহায়ক মাধ্যম

ইন্ডিয়ান পলিটির ওপর দক্ষতা আনতে সর্বপ্রথম প্রয়োজন NCRT-এর একাদশ/দ্বাদশ শ্রেণীর বই পড়া। এছাড়া দরকার প্রতিদিনের সংবাদপত্র পড়ার অভ্যাস। বিষয়টি অধিকাংশের কাছেই নতুন হলেও এটুকু নিশ্চিতভাবে বলা যায় একবার আয়ত্তে এসে গেলে এর চেয়ে সহজ বিষয় আর নেই। বিষয়ভিত্তিক বই পড়ার পাশাপাশি দরকার নিয়মিত চর্চা, প্রশ্ন সমাধানের অভ্যাস করা। পরস্পরের মধ্যে আলোচনা, ডেমো দিলেও বিষয়টি সহজে নিজের আয়ত্তে চলে আসে। অপশনালের ক্ষেত্রে যে সিলেবাস আছে তা কভার করার জন্য কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক স্তরের পাঠ্যবইও অনুসরণ করা যেতে পারে। এই পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য প্রাতিষ্ঠানিক গাইডেন্স একজন পরীক্ষার্থীকে সবদিক দিয়ে তৈরি করে দেয়।

বিষয়টির প্রাসঙ্গিকতা

শুধু চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে সুবিধা নয়, ইন্ডিয়ান পলিটি এবং পলিটিক্যাল সায়েন্সের প্রাসঙ্গিকতা ছাত্রছাত্রীরা বুঝতে পারে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করে। প্রশাসনিক পদে নিযুক্ত হওয়ার আগে নিজের দেশের সংবিধান ও রাজনীতির
হালহকিকত জানা আবশ্যিক। এক্ষেত্রে পলিটিক্যাল সায়েন্স তাদের আরো একধাপ এগিয়ে দিতে পারে। নিজের দেশ এমনকি বিদেশে প্রতিনিয়ত যে রাজনৈতিক ভাঙাচোরা, উত্থান-পতন ঘটছে সে সম্পর্কে প্রতিদিন আপ টু ডেট না থাকলে নিজেকে ও নিজের চারপাশকে চেনা যাবে কী করে?