WBCS প্রিলিমিনারি পরীক্ষার আগে ভাঙতে হবে মনের গোলকধাঁধা

  • WBCS প্রিলি পরীক্ষার আগে ভাঙতে হবে মনের গোলকধাঁধা

পশ্চিমবঙ্গ সিভিল সার্ভিস তথা WBCS প্রিলিমিনারি পরীক্ষা যত ঘনিয়ে আসছে, প্রার্থীদের মধ্যে ততই বাড়ছে প্রত্যাশা এবং উদ্বেগ। একজন সিভিল সার্ভেন্ট হওয়ার যাত্রাপথটি খুব সহজ নয়। তা প্রতি পদে চ্যালেঞ্জে ভরা এবং এই চ্যালেঞ্জ একটা গভীর প্রভাব ফেলতে পারে WBCS প্রার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরেও।

  • WBCS প্রিলির আগের মুহূর্ত যেন মানসিক প্রেসার কুকার

WBCS পরীক্ষার প্রতিযোগিতামূলক প্রকৃতি প্রেসার কুকারের মতো একটি দমবন্ধ পরিবেশ তৈরি করে। প্রস্তুতি, মক টেস্ট এবং মূল্যায়নের নিরলস চক্রে পাক খেতে খেতে একটা সময়ের পর প্রার্থীরা হয়তো ক্লান্ত হয়ে যায়। একদিকে প্রত্যাশার ভার অন্যদিকে ব্যর্থতার ভয় তাদের মানসিক সুস্থতার উপর বড় রকম প্রভাব ফেলে।

  • WBCS প্রিলির আগে সময়ের টানাটানি

উচ্চাকাঙ্ক্ষী ছাত্রছাত্রীদের পক্ষে জীবনের বিভিন্ন প্রয়োজনীয়তার সাথে পরীক্ষার প্রস্তুতির ভারসাম্য বজায় রাখা খুব সমস্যার। পারিবারিক দায়বদ্ধতা, অন্যান্য কাজের সময় এবং পড়াশোনার জন্য বরাদ্দ সময়ের মধ্যে টানাটানি একটি অতিরিক্ত চাপের পরিবেশ তৈরি করে। পড়ার গুরুত্বপূর্ণ সময় হারিয়ে যাওয়ার ভয় এমনই  পেয়ে বসে যে রাতের ঘুম হয় না এবং মানসিক চাপ বেড়ে যায়।

  • WBCS প্রিলির আগে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা

একজন WBCS অফিসার হিসাবে কর্মজীবন শুরু করার জন্য যে প্রস্তুতি তা পরীক্ষার্থীর কাছে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দাবি করে। উচ্চাশা তাদের পড়াশোনায় সেই একাগ্রতা এনে দেয়  যে সে  সামাজিক সম্পর্কগুলোর দাবিদাওয়া থেকে তারা দূরে সরে যায়। এই বিচ্ছিন্নতা একাকীত্ববোধ এবং জীবন থেকে সব আনন্দ উচ্ছ্বাস হারিয়ে ফেলার অনুভূতির দিকে নিয়ে যেতে পারে। এমন সময় পরিবার, বন্ধুবান্ধবই ভরসা। তারাই সবচেয়ে শক্তিশালী সমর্থন যোগাতে পারে, হয়ে উঠতে পারে নির্ভরতার জায়গা।

  • WBCS প্রিলির আগে অজানা ভয়

পরীক্ষার প্রক্রিয়ার একটা অনির্দেশ্যতা অনিশ্চয়তা থাকবেই। রাত জেগে জেগে পড়াশোনা করলেও সবসময়ই এটা মনে হতে থাকে কি জানি পরীক্ষা দিতে বসে এটা মনে পড়বে তো? বা, এই প্রস্তুতিই যথেষ্ট কিনা, কিম্বা, প্রস্তুতিতে কোথাও কোন কমতি থেকে গেল না তো, কিছু পড়া বাদ রয়ে গেল না তো ইত্যাদি। এই ভয়গুলো খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু অজানা এই ভয় যদি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে ওঠে তবে তা পরীক্ষার্থীর মানসিক স্বাস্থের জন্য খুবই ক্ষতিকর।

  • WBCS প্রিলির আগে মানসিক উদ্বেগের মোকাবিলার প্রক্রিয়া:

WBCS প্রিলির আগে এই অশান্ত মনকে নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে, নইলে কিন্তু একটা পরীক্ষাই শুধু ভেস্তে যাবে না, পরবর্তী পরীক্ষাগুলির জন্যও ভেঙে যাবে আত্মবিশ্বাসের ভিত্তি। তাই মানসিক চাপ কমাতে দরকার নিয়মিত বিরতি, শারীরিক ব্যায়াম এবং মনকে মাঝে মধ্যে বিরতি দেওয়া। এই অবকাশটুকুতে পড়াশোনার বাইরে একটু ঘুম হতে পারে, হতে পারে একটু ঘরের বাইরে বেরোনো, কোন কিছুর শখ থাকলে সেই বিষয়টা নিয়ে নাড়াচাড়া করা বা প্রিয়জনেদের সঙ্গে একটু সময় কাটানো।  এই বিরাম নিতান্তই আবশ্যক, এর ফলে যা পড়া হয়েছে তা ভুলে যাবে না বরং মন- মস্তিষ্ক হাল্কা হওয়ায় পড়া সহজে আত্মস্থ হবে।

  • WBCS প্রিলির আগে সমর্থন খোঁজে মন

WBCS প্রস্তুতির যাত্রা কখনো একাকী নয়। রাজ্যের হাজার হাজার প্রার্থী এই পরীক্ষায় সামিল। সক্রিয়ভাবে পরিবার, বন্ধুবান্ধব বা শিক্ষকদের সমর্থন তাদের ঘিরে আছে একথা ভোলা চলবে না। নিজের উদ্বেগ এবং সুবিধা অসুবিধার কথা নিয়ে তাদের সঙ্গে খোলাখুলি আলোচনা করা মানসিক স্বস্তি দিতে পারে। শিক্ষক এবং সহপাঠিদের পারস্পরিক উত্সাহদান এবং নির্দেশনা একজন পরীক্ষার্থীর জন্য খুবই মূল্যবান স্বস্থিদায়ক উপায় হিসাবে কাজ করতে পারে।

  • WBCS প্রিলির আগে মনযোগী প্রস্তুতি

যদিও প্রস্তুতিতে কঠোর পরিশ্রম অপরিহার্য, তবুও তার পাশাপাশি একটি মননশীল পদ্ধতি অবলম্বন করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কত ঘন্টা পড়লাম এই হিসেবের চেয়েও জরুরী নিখাদ মনোযোগের সঙ্গে পড়াশোনার উপর জোর দেওয়া। যতটুকু সময় একাগ্রতা ধরে রাখা যাচ্ছে সেই সময়টুকুর পরে বিরতি নিতে হবে। এই পদ্ধতি ক্লান্তি প্রতিরোধ করতে পারে। বাস্তবসম্মত লক্ষ্য স্থির করা এবং সেই পথে ছোট ছোট জয়গুলিকে স্বীকার করা পরীক্ষার আগে আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে তোলে। এই পদ্ধতি পরীক্ষার্থীর মধ্যে একটি ইতিবাচক মানসিকতার জন্ম দেয় যা তার পরীক্ষার সফলতার পথের প্রথম সোপান বলে চিহ্নিত করা যায়।

  • WBCS প্রিলির আগে মানসিক স্বাস্থ্যের গুরুত্ব

সিভিল সার্ভিসের প্রস্তুতিপর্বে মানসিক স্বাস্থ্যের তাত্পর্যকে কোনভাবেই অবহেলা করা যায় না। একটি সুস্থ মনই পারে কঠিনতম  চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে; তাকে জয় করতে। পরীক্ষার্থীদের উচিত তাদের মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়া, বুঝতে হবে যে একটি সুস্থ মনই জ্ঞান আত্মস্থ করার ক্ষমতা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার দক্ষতা বাড়ায়।

  • WBCS প্রিলির আগে মানসিক স্থিতিশীলতা

WBCS শুধু পুঁথিগত জ্ঞানের পরীক্ষা নয়— প্রিলি থেকে মেইন পরীক্ষার পথ পার করে ইন্টারভিউ পর্যন্ত তা মানসিক চাপ নেওয়ার ক্ষমতা এবং স্থিতিশীলতাকেও পরীক্ষা করে। পরীক্ষার্থীদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাস এবং ধৈর্যের সঙ্গে এই যাত্রাটি সম্পূর্ণ করতে হবে। বিষয়ের প্রস্তুতি এবং মানসিক স্বাস্থ্যের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা শুধুমাত্র পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য নয় বরং সিভিল সার্ভিসে একটি সফল এবং সুদীর্ঘ ক্যারিয়ার নিশ্চিত করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

WBCS-এর আকর্ষণ অমোঘ, কিন্তু একথাও মনে রাখতে হবে যে মানসিক সুস্থতা একটি বিলাসিতা নয় বরং একটি প্রয়োজনীয়তা। একটি সুস্থ মন হল কম্পাসের মত যা উচ্চাকাঙ্ক্ষী পরীক্ষার্থীদের বড় বড় চ্যালেঞ্জের গোলকধাঁধায়ও পথ দেখায়, তাদের চিন্তার পরিপূর্ণতা এবং পরিস্থিতির মধ্যে ভারসাম্য তৈরি করে সাফল্যের দিকে নিয়ে যায়।

WBCS প্রিলিমিনারি ২০২৩; শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি

WBCS প্রিলিমিনারি ২০২৩; কিছু জরুরী কথা    

বলা যায় WBCS প্রিলিমিনারি পরীক্ষা হল নতুন জীবনের প্রবেশপথ। যারা এই পরীক্ষার তোরণ পার করে প্রবেশ করতে পারবে তারাই পারবে মেইন পরীক্ষায় বসতে। তারপর চূড়ান্ত পর্যায়ের ইন্টারভিউ অনেক দীর্ঘ যাত্রাপথ! সেই যাত্রাপথ কিন্তু দুর্গম হলেও দুঃসাধ্য নয়। প্রতিবছর একঝাঁক উজ্জ্বল তরুণ-তরুণী এই কঠিন পথ পার করে ওই সম্ভ্রমপূর্ণ উচ্চপদে বসে! সুতরাং, প্রাথমিক কঠিন পরিস্থিতিকে জয় করতে পারলেই সামনে জীবন নিশ্চিত ও সুন্দর। তাই ‘কষ্টকে মনে কর কষ্ট নয়’! 

তোমরা যারা WBCS প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দিতে চলেছো প্রথমে তাদের অভিনন্দন জানানো দরকার যে তোমরা রাজ্যের প্রশাসনিক দায়িত্ব এবং আরও অন্যান্য গুরুভার তুলে নিতে প্রস্তুত হয়েছো। তারপর বলার বিষয় এই যে প্রিলিমিনারি পরীক্ষা দেওয়ার প্রস্তুতি যতই নিখুঁত হোক না কেন পরীক্ষার হলে বসে কখনোই দুটো ভুল করা যাবে না –এক. অতিরিক্ত আত্মপ্রসাদ এবং দুই. উদ্বেগ। এই দুই-ই পরীক্ষায় উত্তর ভুল করার জন্য দায়ী। সাধারণত, WBCS প্রিলিমস পরীক্ষায় একটি পেপার থাকে। প্রশ্নপত্রে 8টি বিভাগ এবং প্রতিটি বিভাগে ২৫ টি করে প্রশ্ন থাকে। মাল্টিপল চয়েসের এই প্রতিটি প্রশ্নের মান ১। ২০০ মার্কের এই প্রিলি পরীক্ষার সময়কাল ২ঘন্টা ৩০ মিনিট। কিন্তু সবচেয়ে প্রণিধানযোগ্য বিষয় হল প্রতিটি ভুল উত্তরের জন্য নেগেটিভ মার্কিং আছে। 

সাফল্য কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। পরিশ্রম মনসংযোগ এবং মেধার সমন্বয়ে তাকে লাভ করতে হয়। পরীক্ষার হলে বসে মনসংযোগ করতে হবে প্রশ্নপত্রের প্রতি। এখানে MCQ ধরণের প্রশ্ন থাকে এবং আমরা সবাই জানি এর উত্তর দিতে হয় আলাদা OMR শিটে। প্রত্যেকটি প্রশ্নের জন্য চারটি করে অপশন থাকে। OMR শিটে প্রশ্নের নাম্বার দিয়ে পাশে চারটি অপশন গোল গোল করে দেওয়া থাকে। উত্তর করার সময় সঠিক উত্তরটিকে কালো বলপয়েন্ট পেন দিয়ে ভরাট করতে হয়। সুতরাং যদি এমন হয় কোয়েশ্চেন পেপার হাতে পেয়ে এক ঝলক দেখেই মনে হয়, আরে এ তো খুব সহজ প্রশ্ন এসেছে, বা সব কমন এবং প্রচন্ড আত্মবিশ্বাসে উত্তর করতে আরম্ভ করে দেওয়া হয় তাহলে ভুল হতে পারে। OMR শিটে আছে শুধু নাম্বার আর অপশন, বেখেয়াল হয়ে ভুল নাম্বারের কোয়েশ্চেনে উত্তর করে দিলেই সর্বনাশ! ওই প্রশ্নের উত্তর তো ভুল হলই, সঠিক জানার জন্য ১ নাম্বার পাওয়া গেল না। উপরন্তু ভুল উত্তরের জন্য এক নম্বর কাটা গেল। 

সুতরাং, OMR শিট ভরার সময় সাধু সাবধান! অনেক সময় প্রশ্নের খুব কাছাকাছি উত্তরের অপশনগুলো এমনভাবে দেয় যা খুব ঠান্ডা মাথায় না দেখলে তফাৎ করা যাবে না। আবার একই উত্তরের হয়তো দুটো অপশন দিয়ে দিল, সেক্ষেত্রে প্রথম যেটি ঠিক অপশন সেটিকে চিহ্নিত করতে হবে।  প্রশ্নটি যেমনভাবে পড়ে আমরা অভ্যস্ত ঠিক তার বিপরীত ক্রমেও দিতে পারে। যেমন ধরা যাক আমরা এরকম প্রশ্ন পড়ে থাকি ‘কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে এর মধ্যে কোন প্রাণীটি সংরক্ষণ করা হয়?’ কিন্তু প্রশ্ন এরকম হতেই পারে ‘কাজিরাঙা অভয়ারণ্যে এর মধ্যে কোন প্রাণীটি সংরক্ষণ করা হয় না? এই ‘না’-টুকুকে খেয়াল না করলেই ভুল হয়ে যাবে— কমে যাবে প্রাপ্ত নাম্বারের অঙ্ক। 

বোঝাই যাচ্ছে, প্রশ্ন যেমনই আসুক মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে, প্রথমে প্রশ্ন হাতে পেয়ে বেশ কয়েকবার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ভালোকরে দেখে নিতে হবে। MCQ টাইপ পরীক্ষা খুব বেশি সময়সাপেক্ষ নয়। কিন্তু সময় নিতে হবে ভাবতে, বুঝতে এবং সঠিকভাবে OMR শিট ভরতে। WBCS প্রিলি পরীক্ষায় নাম্বার খুব জরুরী, যেন একটা নাম্বারও ভুলবশত কাটা না যায় সেই খেয়াল রাখতে হবে। কেননা বোর্ড যখন কাটঅফ মার্ক ঘোষণা করবে তখনই কম নাম্বারের প্রার্থীরা বাদ পড়ে যাবে। তাই নাম্বারটা যেন উপরের দিকে থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। সফলতার পথে বাধা তো আসবেই, সেই বাধা অতিক্রমণেই সাফল্যের আনন্দ। আশা করা যায় ২০২৩-এও প্রচুর ছাত্রছাত্রী WBCS প্রিলি পরীক্ষায় সফল হবে এবং পরবর্তী পর্যায়ে তাদের আমরা দেখতে পাব।